টেলিভিশনের অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর বাইরে এনে ধারণ করার
ধারাবাহিকতায় ইত্যাদি’র এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে মির্জাপুর উপজেলার
মহেড়া জমিদার বাড়িতে। বাংলাদেশে যেমন অসংখ্য ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক,
সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান আছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু
দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন স্থাপনা। যা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
মহেড়া জমিদার বাড়ি তেমনি একটি নান্দনিক স্থাপনা। জমিদার বাড়িতে স্থাপিত
বিভিন্ন ভবনের সুদৃশ্য ও আকর্ষণীয় শিল্পমণ্ডিত কারুকার্য এবং এর প্রাচীনত্ব
দর্শক ও পর্যটকদের নিয়ে যায় এর সুবর্ণ অতীতে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য,
সভ্যতা, সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি’তে সবসময়ই দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচারবিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে
তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের এসব কাজ দেখে অন্যরাও
অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এবারের পর্বেও রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি
থানার দোতরাপয়সা গ্রামের মোহাম্মদ শরীফ এবং লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার ৬
নম্বর ভাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ওপর একটি উদ্বুদ্ধকরণ
প্রতিবেদন। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও যারা জয় করেছেন তাদের
অক্ষমতাকে। গ্রিন সেভার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের ওপর রয়েছে
একটি উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন। যে প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সদস্য দেশের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। ‘আমাদের গরজে-আপনার খরচে’- এ স্লোগান দিয়ে
তারা শহরের বাড়িতে বাড়িতে পরিত্যক্ত ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে অল্প খরচে
ফুল-ফল, সবজি বাগান করে দেয় এবং পরিচর্যা করার পরামর্শ দেয়। এবারের
ইত্যাদি’তে মূল গান রয়েছে দু’টি। এর মধ্যে একটি দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
এবং সুর করেছেন আলী আকবর রূপু। গানটি দর্শকদের সামনে চিত্রায়িত করা হয়। আর
একটি গান গেয়েছেন জনপ্রিয় অভিনয় তারকা চঞ্চল চৌধুরী ও তারিন। রাজকন্যার
সঙ্গে একজন উদাসীন কবির প্রেম প্রসঙ্গ নিয়ে রচিত এ গানটিও লিখেছেন মোহাম্মদ
রফিকউজ্জামান এবং সুর করেছেন আলী আকবর রূপু। গানটি চিত্রায়ণ করা হয় মহেড়া
জমিদার বাড়ির বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে। যেহেতু ইত্যাদির বিভিন্ন অনুষ্ঠান
বিভিন্ন স্থানে করা হয়, তাই দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী সেই স্থানকে ঘিরে
দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় এবং সঠিক উত্তরদাতাদের মঞ্চে আমন্ত্রণ
জানানো হয়। এবারও বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে দর্শক বাছাই করা হয়।
নির্বাচিত দর্শকদের নিয়ে করা হয় দ্বিতীয় পর্ব। নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও
রয়েছে যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ। রয়েছে বিভিন্ন
সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। সামপ্রতিককালে
পরিচিত পাওয়া কিছু শব্দের ওপর পাবলিসিটি, প্রচারের নতুন কৌশল, নাটক
নির্মাণের বাজেট, প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি, চায়ের দোকানের সতর্কবাণী,
রিয়েলিটি শো’র নতুন আইডিয়া, জনতার সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রয়েছে
বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন
মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। এবারের ইত্যাদি’তে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন নাজমুল
হুদা বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, আবদুল কাদের, আফজাল শরীফ, সুভাশিষ ভৌমিক,
সোলায়মান খোকা, আবদুল আজিজ, শবনম পারভীন, নিপু, কিসলু, মামুনুল হক টুটু,
জিল্লুর রহমান, রতন খান, কামাল বায়েজিদ, আনোয়ার শাহী, কাজী আসাদ, মুকুল
সিরাজ, নজরুল ইসলাম, বিলু বড়ুয়া, বিনয় ভদ্র, রবিন, শামীমসহ আরও অনেকে।
পরিচালকের সহকারী হিসেবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন। সব শ্রেণী-পেশার
মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি’র আগামী পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি
ওয়ার্ল্ডে প্রচার হবে ২৯শে নভেম্বর রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর এবং
পুনঃপ্রচার করা হবে ১লা ডিসেম্বর রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর। ইত্যাদি’র
রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও
ভিশন। ‘ইত্যাদি’ স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২৬ নভেম্বর ২০১৩
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন