ডিজিটাল চলচ্চিত্রের নামে ফাঁকিবাজিতে ব্যস্ত
একশ্রেণীর প্রযোজক-পরিচালক। তাদের এই ফাঁকিবাজি, কারও কারও মতে দর্শকদের
সঙ্গে প্রতারণার কারণে চলচ্চিত্রের ব্যবসা কমছে, দর্শক মনে বাড়ছে হতাশা ও
ক্ষোভ। অনেক আশা নিয়ে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখে হতাশ হচ্ছেন।
প্রেক্ষাগৃহের ভেতরেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন তারা। তাদের
প্রতিক্রিয়া শুনে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে অপেক্ষমাণ অনেক দর্শক সিনেমা না
দেখেই ফিরে যাচ্ছে। গত ঈদ থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর অধিকাংশের
ক্ষেত্রেই দেখা গেছে একই চিত্র। সরেজমিন কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে
গিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হলো যে, বর্তমানের ছবির প্রযোজক-পরিচালকরা মাছের
তেলে মাছ ভাজতে ব্যস্ত। শুধু ডিজিটালের নামে রেড কিংবা অ্যারি এলেক্স
ক্যামেরায় চিত্রায়ণ করেই তারা দায়িত্ব শেষ করছেন। গল্প, গান, নির্মাণশৈলী
এবং চরিত্রানুযায়ী শিল্পী মনোনয়নে কোন গুরুত্বই দিচ্ছেন না। শুধু ঝকঝকে ছবি
হলেই ডিজিটাল হয়ে যায়- এমন ধারণায় ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে দর্শকদের ফাঁকি
দেয়ার চেষ্টা করে যথারীতি ব্যস্ত হচ্ছেন তারা। খোলামেলা পোস্টার এবং একটি
ডিজিটাল সিনেমা স্লোগান দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানার চেষ্টা করলেও
একদিনের বেশি তারা দর্শক ধরে রাখতে পারছেন না। দর্শকরা কোন কোন
প্রেক্ষাগৃহে ঝকঝকে ছবিও পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না গল্প, নির্মাণশৈলী এবং
শিল্পীদের প্রাণবন্ত অভিনয়। গল্পে জোর না থাকায় তারকা শিল্পীরাও ব্যর্থ
হচ্ছেন। আর খরচ কমাতে গিয়ে প্রযোজক-পরিচালকরা নতুনদের নামে কিছু কিছু নায়ক
নায়িকাকে উপহার দিচ্ছেন, যারা কোনদিক দিয়েই দর্শকদের মন জয় করতে পারছেন না।
দর্শক কারও কাছ থেকে বিনোদন পাওয়ার মতো নতুন কিছুই পাচ্ছেন না। অর্থ
সাশ্রয় করতে গিয়ে প্রযোজকরা এখন পুঁজি হারাতে বসেছেন। অধিকাংশ ছবিই দর্শক
দেখছে না। পরিচালকদের মধ্যেও ভাল কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা নেই। প্রযোজকের
আজ্ঞাবহ হয়ে সিনেমার নামে কিছু একটা বানাতে ব্যস্ত। নতুন নায়িকাদের মধ্যে
দেহ প্রদর্শনের বাইরে কোন কিছুই করার থাকছে না। নায়করা বুঝতে পারছেন না
কোনটা করা উচিত আর কোনটা উচিত নয়। যা পাচ্ছেন যেভাবে পরিচালক নির্দেশ
দিচ্ছেন সেটাই করছেন। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পুরো চলচ্চিত্র শিল্পে। আর
বিশ্ব স্বীকৃত ‘ডিজিটাল’-এর পূর্ণ ব্যবহার করতে না পারার কারণে এ
প্রযুক্তিরও অপব্যবহার চলছে। অনেক প্রেক্ষাগৃহেই মাঝে মধ্যে ছবি আটকে
যাচ্ছে নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে। এতে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত
থাকা হাতেগোনা দর্শকরাও চরম বিরক্তি প্রকাশ করছেন। ‘ডিজিটাল সিনেমা’র নামে
যে কেউ এখন সিনেমা বানাচ্ছেন। অনেকে টেলিফিল্ম কিংবা নাটকের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
করে ডিজিটাল চলচ্চিত্র বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে অভিযোগ পাওয়া
যাচ্ছে। আর যারা দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা নির্মাণ করছেন তাদের মধ্যেও ভাল কিছু
করার অভাব দেখা যাচ্ছে। এমনিতেই রাজনৈতিক কারণে দেশের অবস্থা ভাল না। তার
ওপর আর ডিজিটাল সিনেমার নামে নিম্নমানের ছবি বানিয়ে দর্শকদের সঙ্গে
ফাঁকিবাজি, সেই সঙ্গে প্রতারণায় লিপ্ত প্রযোজক-পরিচালকরা। এদের বিরত করতে
নেই কোন নীতিমালা। দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ দেখতে
দেখতে ক্লান্ত, বিরক্ত। গোঁজামিলের কারণে বিদেশী লোকেশনও দর্শকদের মন ভরাতে
পারছে না। এ অবস্থায় দেশের মতো চলচ্চিত্র শিল্পও আসলে কোন দিকে চলেছে সেটা
অভিজ্ঞ চলচ্চিত্র বোদ্ধারাও অনুমান করতে পারছেন না।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২৯ নভেম্বর ২০১৩
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন